সন্তানের জন্য পিতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ হতে পারে না

শিল্পপতি বাবার একমাত্র ছেলে রাতুল তখন এ লেভেলের ছাত্র। একেতো শিল্পপতির ছেলে, তার উপর ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করে। ভাবি আলাদা ফ্রেন্ড নিয়ে ক্লাবে ক্লাবে পার্টির, নতুন নতুন ড্রিং করা সবকিছু মিলিয়ে অন্যরকম একটা মাস্তির লাইফ কাটছিল। বন্ধুদের মধ্যে তার একটা লিডার লিডার ভাবছিল, তার কারণ সে সবচেয়ে বেশি খরচ করত।

সন্তানের জন্য পিতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ হতে পারে না

একদিন প্ল্যান করল বন্ধুরা মিলে থাইল্যান্ড যাবে। দূরে আর তার এইবারের জন্মদিন সেইখানেই সেলিব্রেট করবে। এর মধ্যে আমার দুই বন্ধু একটু গরিপ, তাদের খরচ রাতুলকে বহন করতে হবে। তার বাবা বাসায় ড্রইংরুমে বসে, কথা যাচ্ছেন বাবার সামনে যেতেই রাসুল কিছু বলার আগেই বাবা বলল অ্যামাউন্ট কত রাত এল ভরলো না মানে বাবা সামনে আমার জন্মদিন তো তাই মানে এই আরকি বাবা উচ্চস্বরে রেগে গিয়ে বলল আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি এমাউন্ট।

নিজেকে কিভাবে পরিবর্তন করবঃ

২লক্ষ বাবা, রাতুলের বাবা বললেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান তুমি জন্ম নিয়ে জাতিকে কৃতার্থ করেছো তোমার জন্মদিনে মাত্র দু লক্ষ টাকা খরচ হবে কম হয়ে গেল না তো, এর মধ্যে রাতুলের মা চলে এসেছেন কি হয়েছে আমাদের একমাত্র ছেলে সম্পদ সবকিছুই তো একদিন ওর হবে দিয়ে দাও ওর মনে কষ্ট দিও না। মায়ের এই কথার উত্তরে রাতুলের বাবা উত্তর দিলেন, আমি যদি আমার ছেলেকে একটা উড়ন্ত বিমানের পাইলটের সিটে বসিয়ে তোমার ছেলের উপর প্লেনের দায়িত্ব দিয়ে নেমে পড়ি তখন কেমন হবে তুমি বলতো।

সন্তানের জন্য পিতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ হতে পারে না

এই সম্পদ একদিনে আসেনি এর দায়িত্ব নিতেও নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয় ঠিক আছে, আমি তোমার ছেলেকে দু’লক্ষ টাকা দেবো, যদি সে আগামীকাল আমাকে পরিশ্রম করে 200 টাকা উপার্জন করে এনে দিতে পারে।

রাতুল মনে মনে বলল সারারাত না খেয়ে ঘুমিয়েছে মাত্র ২০০ টাকা লোড বাবা আগামীকালই দেখতে পারবে আমি তার সম্পদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্য হয়েছিল, পরের দিন সকাল সাতটায় বাবা রাসূলকে দেখে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো কি যে বিরক্ত লাগছিল তার মাত্র ২০০ টাকার জন্য এত সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে রেডি হয়ে একেবারে ফুলবাবু সেজে ২০০ টাকা উপার্জন করতে বের হয়েছে।

জীবন কীঃ সে পকেটে একটা টাকাও নেই সাথে বাবা একজন স্পাজিও দিয়েছে ঘর থেকে বের হওয়ার পর, এখন মনে হচ্ছে সে একটা সমুদ্রের মাঝে পড়ে গেল। বিনা পুঁজিতে টাকা কোথায় পাবে, কারো কাছ থেকে ধার করতে পারছে না। কারো সাহায্য নিতে পারছেনা, বৃক্ষ করতে পারবে না ভাবতে ভাবতে দুপুর হয়ে গেল। অবশেষে একটা রিকশার গ্যারেজে গেলো।

মনে মনে ভয় পাচ্ছিল অনেক মানুষ আছে রিক্সাওয়ালার গায়ে হাত তোলে, যদি তাকে কেউ রিক্সাওয়ালা ভেবে মারে। তখনি বিবেগ  রাসূলকে বুঝিয়ে দিল রিক্সাওয়ালাও  মত মানুষ,তাদের গায়ে হাত তোলা অন্যায়। রিকশার গ্যারেজে যাবার পর অপরিচিত মানুষ বলে তারা তাকে রিক্সা দিল না। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো রিক্সা পাইনি তো কি হয়েছে, রিক্সা খেলতে তো পারবে। সে মনে মনে ভাবল আমি আমার বাবার ছেলে এতো সহজে হার মানবো না।

তখন উঁচু উঁচু ব্রিজ গুলোতে পেছন থেকে একজনকে রিক্সাওয়ালার সাথে ঠেলে উপরে উঠিয়ে দিতে হতো। বিনিময় যাত্রীরা এক টাকা করে দিত, জীবনে কোনো কাজই করেনি এক গ্লাস পানিও নিজে ঢেলে খাইনি আর আজ তপ্ত রোদে রিক্সা ঢেলেছে। এইভাবে এক ঘন্টায় .১০ টা রিক্সা খেলে ১০ টাকা উপার্জন করেছে। ১১ নম্বর রিক্সা খেলতে গিয়ে পড়ে হাঁটু ছিলে গেলো।

জীবনে খারাপ সময়ঃ

আবার উঠে দাঁড়াল সে, যখন যাত্রীরা রাতুলের হাতে এক টাকার একটা কয়েন দিচ্ছিল তখন চোখ দিয়ে কেন যেন কান্না চলে আসলো। ঘণ্টাখানেক পর হাঁটুর ব্যথা আরো তীব্র হতে লাগল, সন্ধ্যা পর্যন্ত গুনে দেখে মাত্র ৪০ টাকা হয়েছে। আর পারছিনা, প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে মনে হচ্ছে শরীরে যেন নিজের সাথে প্রতারণা করছে। তার সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছে, অবশেষে ৪০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল, বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ৪০ টাকা বাবার হাতে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমি পারিনি বাবা।

ভেবেছিলাম আমার বিদ্ধস্থ ক্লান্ত চেহারা হাঁটুর কাছে ছেঁড়া প্যান্ট দেখে বাবা হয়তো কেঁদে দিবে। হয়ত তিনি রাসুলের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিবেন, না তিনি এগুলো কিছুই করেননি বরং রাতুলকে বললেন এখন আমার সাথে হেঁটে সেতুর কাছে যাবে। কোনো প্রশ্ন করবেনা, রাতুল অবাক হলো এখন মনে হচ্ছে তিনি সত্যিই একজন ব্যবসায়ী।

এর পরেও সে প্রশ্ন করল, বাবা এটা কেন তিনি বললেন বাবা আমি তো আজকে এই পজিশনে একটু একটু করে এগিয়ে এসেছি, গাড়ি বা বিমানের গতিতে আসলে তুমি তো মাত্র একদিন কষ্ট করেছ একটু ধৈর্য ধর বাবা। সে কি করে বোঝাবে তার ক্লান্তির কথা এর চাইতে মৃত্যুর যন্ত্রণা অধিক শ্রেয়। বাবার আঁচলের হাত ধরে হাটতে হাটতে রাত তিনটায় তার একটি ব্রিজে উঠল শান্ত নদী ডিজে রাতুল তার বাবা ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বাবা তাকে বলল, দেখো রাতুল নিচের কেমন অথৈ পানি টলমল করছে।

তুমি আমার হাতে ৪০ টাকা দিয়েছ  তাই না জীবনে আমার জীবনের প্রথম উপার্জন রাসুল উত্তর দিলো। তার বাবা বললেন আমি জানি রাতুল, এই টাকাগুলো উপার্জন করতে তোমায় অনেক কষ্ট হয়েছে,এখন তোমাকে যা বলি শোনো আমি জানি আমার ছেলে ছোট বেলা থেকেই ম্যাথামেটিক্স খুবই ভালো তাহলে ভালো গণনাও পারো আশা করি, এখন আমি তোমার উপার্জনের ৪০ টাকা দূরে পানিতে ছুড়ে ফেলবো

আর তুমি বলতে থাকবে বাকি কয়টা রইল। বাবার কথা শুনে রাসূলের চোখে আবার পানি চলে আসলো। বাবা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা কয়েন সেতু থেকে দূরে পানিতে ছুড়ে ফেলে বলল রাতুল এখন কয়টা রইল, সে কাঁদতে কাঁদতে বলল বাবা ৩৯ টা এইভাবে একা করে তার চোখের সামনে জীবনের প্রথম উপার্জিত এত কষ্টের সবগুলো টাকা পানিতে ফেলতে লাগল।

সন্তানের জন্য পিতার চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ হতে পারে না

রাতুল এক এক করে গুনছে এমন একটি পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। শুধু জানে তার চোখ থেকে ঝরে পড়া প্রতিটি অশ্রু। যেন কেরোসিনের তেল এর মতই আমার হৃদয় কে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। বাবা তার গায়ে কোন দিন হাত তোলেন নি, কোনোদিন একটা বকাও দেয়নি, আজ মনে হচ্ছে সব সুদে-আসলে পুষিয়ে নিচ্ছেন। শেষের টাকাটা বাবা ফেললো না। তারপর বললো রাতুল তোমার উপার্জনের ৪০ টাকা আজকে আমি নষ্ট করাতে তুমি কাঁদলে।

আর আমার কত টাকা তুমি এইভাবে নষ্ট করেছো, কোথায় আমিতো একবারও কাদিনি,তোমার অনুভূতিতে যেমন কষ্ট লাগছে, আমারও ঠিক তেমনি অনুভূতি আছে কষ্ট উপলব্ধি করার জন্য। তোমার শেষের এই টাকা আমি রেখে দিলাম, এটা আমার সন্তানের প্রথম উপার্জিত টাকা এটা একজন পিতার জন্য গর্বের একটা প্রাপ্তি, এটা স্মৃতি হিসেবে আমি মৃত্যু পর্যন্ত সাথে রাখবো।

তুমি কাল তোমার মায়ের কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা নিয়ে নিও। বাবার এই কথাগুলো শোনার পর নিজেকে বড় বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিল, রাতুলের আবেগ আর ধরে রাখতে পারছিলো না। সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলল বাবা আমার টাকা লাগবে না। আমি এতদিন স্কুল-কলেজে কিছুই শিখিনি, যেটা তুমি আজকে শেখালে তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। আদর্শ বাবার চাইতে বড় শিক্ষক কেউ হতে পারে না। একজন আদর্শ পিতা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

আমাদের পোস্টস ভাল লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদ!!!!!!!!

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *