নানুর উপর রাগ করে বৌ নিয়ে ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিল
ছোটমামা প্রায় ১০ বছর দেশে ফিরেছে। সেই যে নানুর উপর রাগ করে বৌ নিয়ে ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিল,আর এই এলো। তাও নানীর শরীর খারাপ শুনে। নানুবাড়ি মফস্বল এলাকায়। প্রথম ২ দিন ওখানে থেকে আমাদের ও ছোটখালাদের নিতে ঢাকায় এসেছে। সে নাকি অনেক হিসেব করে দেখেছে,আর ২ দিন পর ৩ দিন একনাগাড়ে সরকারি ছুটি আছে। তাই ৩ দিনের সফরে আমরা ২ পরিবারের ৮ জন সদস্যকে নিয়ে যাবার গোঁ ধরেছে। বাবা সাধারণত কোথাও রাতে থাকতে যায় না। এবার কিভাবে ছোটমামা মানিয়ে নিল। ছোটখালু দেখি যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু সব মিলিয়ে ৭জন যাবে স্থির হল।
মামা নির্দিষ্ট দিনে যাবার প্রমিজ করিয়ে, বাড়ির সবকিছু ঠিক করতে চলে গেল। মামাদের আর্থিক অবস্থা আগে খারাপ থাকায় আমার বাবা তাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সে কৃতজ্ঞতা বোধ কিছুটা দৃষ্টি গোচর হওয়ার জন্যই বোধহয় ছোটমামার এ আপ্রাণ চেষ্টা। আমার মা খুব খুশি, এতো দিনে স্বামীর প্রতিদান কিছুটা হলেও দেয়া যাচ্ছে বলে। আর আমি ও মিতু তো ভীষণভাবে এক্সাইটেড। দুজনে দুখানা শাড়িও নিয়েছি ব্যাগে। আমরা গিয়ে দেখি অভ্যর্থ্যনার চুড়ান্ত করেছে মামা। অনেক মানুষকে টাকা দিয়ে কাজে লাগিয়ে সারাবাড়ি পরিস্কার করিয়েছে। দরজা জানালা রং করিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের উপর ভরসা না রাখতে পেরে বাবার কষ্ট হবে লাইটের বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছে। গ্ৰাম ছাড়িয়ে বেশ দূরে মাছের আড়তে গিয়ে ফ্রেশ মাছ কিনে নিয়ে এসেছে।
সুগন্ধি ১০ কেজি চিকন চালের জন্য খানবাড়িতে টাকা দিয়ে পাঠানো হয়েছে। বিকেলে পুকুর পাড়ে বসে চা খেতে পারে যেন,সে কারণে সামনের পুকুর পরিস্কার করিয়েছে। বড়মামীর মেহমানদারি করতে কষ্ট হবে ভেবে,২জন বুয়াও এসেছে। বাবা ও খালু মাছ ধরতে ইচ্ছে করলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। আগে ওয়াশরুম একটাতে হাই কমোড লাগানো ছিল, এখন অন্য টাতেও লাগানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এলাহী সব কারবার আর কি।
আমার চিরকালের ভালো বাবা এসব দেখে ছোট মামাকে বকছেন, টাকা কি গাছে ধরে না কি? এতো এতো টাকা নষ্ট করার কোনো মানে আছে কি? সাথে সাথে ছোটমামার অকপট জবাব, সারা জীবন শুধু আপনার খেয়েছি। এবার সুযোগ যখন পেয়েছি একটু আদর যত্ন করতে দিন প্লিজ। বড় মামাও ভীষণ খুশি আমাদের পেয়ে। আমার নানু তো খুশিতে কান্না করছেন আর চোখে আঁচল দিচ্ছেন। সবসময় সংসারের কাজে জেরবার মা ও খালা যেন তাদের শৈশবে ফিরে গেছেন।
শরীফ বসে থাকতে থাকতে
Table of Contents
পরদিন নাস্তা করে বাবা ছোটখালুকে বলল, চলো শরীফ বসে থাকতে থাকতে হাত পায়ে খিল ধরে গেছে। গ্ৰামটা ঘুরে আসি। সাথে সাথে আমি, মিতু, খালা ও মা তাদের সঙ্গী হয়ে গেছি। এতো ভালো লাগছে। নদী পাড়ে কিছুক্ষণ হেঁটে এলোমেলো পায়ে আরো কিছু পথ চলার পর হঠাৎ মা বলে উঠে,আরে সামনের বাড়িটা তো নেফুরদের বাড়ি।নেফুর খালাকে আমরাও চিনি। তিনি মায়ের দূর সম্পর্কের চাচাতো বোন।
বিয়ে হয়নি বলে উনার ভাইয়ের ছেলে কে নিয়ে গ্ৰামে থাকেন। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় যান। মা যখন যা পারে সাহায্য করে। কিন্তু ছোট খালা এসব পছন্দ করে না বলে একবারও তাকে তার বাসায় নিয়ে যায়নি। আমার মাকে কখনো তার জন্য স্পেশাল কিছু রাঁধতে দেখিনি। বাসায় সাধারণ যা কিছু থাকতো তা দিয়ে ই নেফুর খালাকে খেতে দেয়। ছোট একটা ঘর, কিন্তু খুব সুন্দর নিকানো উঠোন। বাঁশের বেড়া দিয়ে চতুর্দিকে ঘেরা। এখন মা ও খালা ভেতরে ঢুকে নাম ধরে ডাকতে লাগলো। ঘরের পেছনের জমিতে মনে হয় কোনো কাজ করছিলেন, বেরিয়ে এসে মাকে দেখে বুবু বলে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলেন।
বাবা ও খালু কে পাটি বিছিয়ে চাঁপা গাছের তলায় বসতে দিলেন। শীতের দিনের দুপুরে আধো আলো আধো ছায়ায় বসতে খুব ভালো লাগছে। ঘড়ির কাঁটা তখন ১২ টা ছুঁয়েছে। কাকে দিয়ে ৫/৬ টা ডাব পাড়িয়ে অতি নিপুণভাবে মুখ কেটে দিলেন। উনি একটু সরতেই বাবা মাকে বলল,ব্যস্ত হতে মানা করো। বেচারি নিজেই কতো সমস্যায় আছে। মা বলছে,হ্যা পাঁচ মিনিট বসে চলে যাবো। কিন্তু খালা তো রান্নাঘরে। আমি আর মিতু ভেতরে যেতেই দেখি ধোঁয়াতে বসে খালা চালের গুঁড়ির চিপস ভাঁজছেন।
আমার বক্তব্য-টি দু’টি ভাগে ভাগ করে জানাচ্ছি
সাদা ধবধবে বাতাসার মতো চিপস গুলো মুহূর্তেই চিপসের আঁকার ধারণ করছে। পেছনের সবজি বাগান থেকে ঝটপট ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ এনে কেটে,আলু কুচি ও ময়দার সাথে মিশিয়ে অনেক গুলো পাকোড়া বানালেন। তারপর চায়ের পানি বসিয়ে চিপস ও পাকোড়া ট্রেতে করে নিয়ে এলেন। মা বকছে, কিরে তোকে না বললাম ব্যস্ত না হতে? এতো সব পাগল পাগল হয়ে করেছিস কেন? এইমাত্র নাস্তা করে এসেছি আমরা। খালা বলল, আমার ইচ্ছা থাকলেও তোমাদের কে আর কতটুকু সমাদর করতে পারবো বুবু? দুধ তো নেই, লাল চা খাবে তো?
ভাজাভুজি খেতে আমার বাবা ও খালু উস্তাদ। চা খাবেন বলতেই খালার রান্নাঘরে প্রস্থান। ছোট ছোট কাপ বলে প্লাষ্টিকের লাল মগে বাকি চা ঢেলে নিয়ে এসেছেন। বাবা খুব খুশি হয়ে বলছেন, বুঝলে নেফুর আমার মা আমি গ্ৰামে গেলেই এই ভাবে আমাকে উঠোনে পাটি বিছিয়ে দিতো। তুমি অনেক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলে। আমার আসলেই মায়ের কথা মনে পড়ছে। কি রকম এক টা মিশ্র অনুভূতি যেন হচ্ছে আমার। মুহূর্তে আমার নরম মনের ভালো মানুষ বাবার চোখে পানি।
নেফুর খালা খুব সুন্দর করে পান খান। পান মুখে দিয়েই আক্কেল দাঁতের সারিতে নিয়ে চিবুতে থাকেন। তাই সামনের দাঁতগুলো সাদা ধবধবে থাকে। অনেক পুরনো পিতলের একটা পানদানে পান সুপারি দিয়ে বাবার সামনে দিলেন। দিয়ে খুব নম্রস্বরে বাবাকে বললেন, আমি একজন হতদরিদ্র মানুষ আপনি তো জানেন ভাইজান। আপনারা প্রতিবেলা কতো কতো ভালো খাবার খান। আজকে আপনাদের জন্য একটা রাজহাঁস রাঁধি? আমি খুব ভালো রাঁধতে পারি কিন্তু।
আর কি খাওয়াবি আমাদের?
বাবা এরকম পরিস্থিতিতে কি বলবেন বুঝতে পারছেন না তাই মা ই হাল ধরলেন,বোকার মতো কি বলিস? এতো কিছুর পরও আর কি খাওয়াবি আমাদের? আমি সাথে সাথেই আমার খালার দিকে তাকালাম দেখি মাথা নিচু করে একমনে নখ খুঁটছেন। মনে মনে হাসছি দেখো রাজপ্রাসাদের রাণী কেমন করে ঘুটে কুঁড়ানি তোমাকে হারিয়ে দিচ্ছে। নেফুর খালা এবার বাবার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে যেন মাফ চাইছে এমন ভাবে বললো, ভাইজান আমার সারা জীবনের আক্ষেপ থাকবে আপনাদের চারটি ভাত খাওয়াতে না পারলে।
আমার বাবাকে তো আমি চিনি অনেক দিন আগে একবার আমাদের ড্রাইভারের মেয়ের বিয়েতে মা যাবে না বলায় বাবা টানা এক ঘন্টা বক্তৃতা দিয়েছিল কিভাবে বিশ্বনবী অধিনস্তদের সাথে ব্যবহার করেছেন। তার আদরে ভালবাসায় সবাই তাকে নিজের প্রানের চেয়েও ভালবাসতো। বাবা ইতস্তত স্বরে বলল, এতো কষ্ট না করে তুমি বরং আমাদের সাথে ঐ বাড়িতে চলো নেফুর। খালা এবার দূরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, একবার ছুটির দিনে আপনার বাসায় আমি গিয়েছিলাম ভাইজান। দুপুরে খাবার সময় এতো করে না করা সত্ত্বেও আপনি আমাকে একসাথে জোর করে খেতে বসান। আমার মনে আছে, অনেক গুলো আইটেমের সাথে ইলিশ মাছ ভাজা আর কাঁচকলা ও ইলিশ মাছ দিয়ে মজার একটা তরকারি ছিল। বুবুর পাকা হাতের রান্না তো,পরে বলেছেন কাঁচকলা তেলে ভেজে রেঁধে ছিলেন। আপনি কতোবার যে বলেছেন,খাও নেফুর।
নিয়ে পেট ভরে খাও। ভাইজানের বাসায় লজ্জা করতে নেই। আমার এতো বছরের জীবনে খুব কমই আমাকে কেউ এভাবে বলেছে। আর বুবু যে কতো সাহায্য আমারে করে সময়ে অসময়ে কতো বিরক্ত করি তাই বলছিলাম গরীব বোনের আর্জি টুকু রাখেন। মা বলছে তুই আমাদের বোন নেফুর, মনে রাখিস তোর দাবি আছে আমাদের উপর। তাও তো, তুই এতো আইটেম টেবিলে দেখেছিস হয়তো ছুটির দিন ছিল বলে। এমনিতে আমাদের বাসায় এতো বেশি থাকে না। বলে মা আমার দিকে তাকিয়েছে। আমি জানি মার হয়তো মনে পড়ে ।
বাংলালিংক ইন্টারনেট অফার ২০২১ বাংলালিংকের সকল ইন্টারনেট অফার
গেছে গতবার খালা যাওয়ার দিন ম্যেনু চাপা শুঁটকির ভর্তা,ডিম ভুনা ও মুশুরি ডাল ছিল। আমি মাকে বারবার বলেছি,ফ্রোজেন চিকেন মিটবল তো আছে। বের করে তুমি যেভাবে কারি রাধো রেঁধে ফেলো মা। উনি তো গেষ্ট আমাদের বাসায়। মা মাছি তাড়াবার মতো বলে,যা আছে তাতেই হবে। ও এসবে কিছু মনে করবে না। তক্ষুনি আমার মনে হয়েছে, অন্য কেউ হলে মা মরে গেলেও এভাবে খাওয়াতে কক্ষনো রাজি হতো না। মা বলে যাচ্ছে, কি আর করি তোকে বল্। কিন্তু, তুই তো দেখি শোধ দেবার তালে আছিস। খালা বসে ছিল,চট করে মায়ের পা স্পর্শ করে বলে, দোহাই আল্লাহর বুবু এইভাবে বলো না। আমি সারাজীবনেও কণামাত্র শোধ করতে পারবো না।
এবার বাবা বলছেন, ঠিক আছে। তোমার আশা পূর্ণ হোক। আমরা দুপুরে এখানেই খেয়ে যাবো। কিন্তু, তার আগে বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। তড়িৎ গতিতে খালা উঠে গেলেন। আমার খালু খুব ভালো নজরুল সঙ্গীত জানেন। খালি গলায় একটার পর একটা গাচ্ছেন আর আমরা শুনছি। আমার এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসতে ভালো লাগে না, হঠাৎ উঠে ঘরে গিয়েছি। শুনতে পাই, পিছনের উঠোনে খালার ভাইপো খালাকে বকছে রাজহাঁস জবাই করার কোনো দরকার ছিল? তোমার সবতাতেই বাড়াবাড়ি। এই হাটবারে দুইটা বিক্রির কথা ছিল না? এক একটা কমপক্ষে দেড় হাজার করে বিক্রি হতো। একটা কমে যাবে। তুমি মোরগ একটা জবাই করে ফেলো। এবার চাপা স্বরে খালা বলছেন, রাজহাঁস কেনার টাকা এরাই দিয়েছিল ভুলে যাস না। সে এবার বলল, দিয়ে লাভ কি হলো? খেয়েই তো সাবাড় করে যাবে। তোমার এতো দিনের পালার কষ্টই সার। খালা এবার হিসহিসিয়ে বলল, তুই জবাই করবি কিনা বল? আমি আর দাঁড়াই নি, ধীর পায়ে বের হয়ে এসেছি। কি জানি খালা বুঝতে পারলে হয়তো বা লজ্জা পাবে।
আমার বড়ছেলে মানে আমার বাবা
আমার দাদু সবসময় বলে, আল্লাহ তাআলা আমি নাফরমানকে অনেকগুলো নেয়ামত দিয়েছেন। এরমধ্যে একটা হলো আমার বড়ছেলে মানে আমার বাবা। আর আমার ছেলেকে উত্তম নেয়ামত হিসেবে তার মেয়েকে দিয়েছেন মানে আমাকে। আমি এতো দিন এসব শুনে মনে মনে ভীষণ হাসতাম। মনে হতো ভালবাসায় অন্ধ হয়ে এসব বলছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে এসব শুনে বুকের ভেতর অবাক করা উথালপাথাল ঝড় বইছে দেখে ভাবছি, আসলে ই আমি শতভাগ আমার বাবার মেয়ে। কি জন্য জানি না,এই মুহূর্তে নেফুর খালার জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
ভয়ে কি শুনবো কি দেখবো ভেবে ঘন্টা আধেক নড়িনি। এরপর মিতুকে নিয়ে ভেতরে যাই, দেখি উঠোনে আগুন জ্বলছে আর খালা হাস ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লোম পোড়াচ্ছেন। তার ভাইপোকে দেখতে পাচ্ছি না। আমি মনে মনে বলি,ওর ফুপুর এতো কষ্টের ফসল এভাবে আমাদের গলাধঃকরণ হচ্ছে সেটা দেখা আসলেই কষ্টের। নেফুর খালাকে দেখে কিছু বুঝার কোনো উপায় নেই। হেসে বললেন, মামণি রা দাঁড়াও। বরইয়ের মিষ্টি আচার আছে তোমাদের দিচ্ছি। আমি বলি, তুমি ওইদিকে মন দিয়ে কাজ করো। নয়তো হাত পুড়ে যাবে। বিনা বাক্যব্যয়ে তিনি এবার তা ই করে যাচ্ছেন। পাশেই তার চাচাতো ভাইদের পাকাবাড়ি। হাঁস কেটে ও বাড়িতে চলে গেলেন আবার শাড়ির আঁচলের নিচে কিছু নিয়েও এলেন। মিতু অনেক ক্ষণ ধরে তার নতুন প্রেমিকের ফিরিস্তি শোনাচ্ছে।
রাজনীতির বেড়াজাল বড় খারাপ জিনিস, একবার আটকে গেলে তো নিস্তার নেই।
খালা ভাবছেন এরা গল্পে মশগুল, খেয়াল করছে না। আমি দেখি মাটির বাটিতে ও বাড়ি থেকে আনা রসুন ও আদা ভেজাচ্ছেন। একদিকে ভাত বসিয়ে কিভাবে ঝটপট এসব বেটে হাঁস রাঁধতে বসলেন,তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। লোভনীয় এক খুশবুতে চারপাশ ভরে গেছে। অনেকক্ষণ ধরে অনবরত কষাতেই আছেন। মধ্যে আবার উনার ভাইপো অনেক গুলো কচি শসা এনে দিয়েছে। ঝট করে কেটে লবণ মিশিয়ে সবাই কে দিলেন। আমার মা ও খালা একবার এসে ধোঁয়া দেখেই পালিয়েছে। এবার দেখি ভাত হয়ে যাওয়া খালি চুলায় ৪/৫ টা বেগুন পুড়তে দিলেন। মিতু এবার বলছে, বড়খালা বেগুন ভর্তা দেখলে খুব খুশি হয়ে যাবে। খালা এবার জিজ্ঞেস করছে, বুবু আর কি ভর্তা ভালবাসে? মিতুর ঝটপট জবাব, শুঁটকি ভর্তা। আপনিও কি ভর্তা ভালবাসেন খালা? করুণ হেসে খালা বলল, ভর্তাই তো আমাদের নিয়মিত খাবার রে মা।
আল্লাহ রাহমানির রাহিম
একটু কিছু এনে তা আলু হোক, বেগুন হোক আর ঝিঙে হোক পুড়তে দিলে ই আমাদের ফুপু ভাইপোর চলে যায়। আল্লাহ রাহমানির রাহিম গরীব বাঁচার কতো উপায় দিয়েছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি ধনে পাতা ধুতে ব্যস্ত হতেই এইবার মিতু আমাকে ফিসফিসিয়ে বললো, এদের কতো সবর চিন্তা কর। কতো কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটাচ্ছে তবুও কি বলছে। আমি বলি সেজন্যই তো বড়লোকদের বাচ্চাদের যারা অনেক কিছু পাওয়ার পরও কিছু না পাওয়ার কষ্টে আত্মহত্যা করে তাদের ধরে এনে এই সোনার মানুষ গুলোকে দেখানো উচিত। ঘরের লাগোয়া বারান্দায় বাবা ও খালু নামাজ পড়লো। তারপর বেলা আড়াইটায় পাটি বিছিয়ে গরম গরম লাল চালের ভাত, বেগুন ভর্তা আর বিশাল দুই বাটিতে আনা রাজহাঁসের মাংস নিয়ে আমরা খেতে বসলাম। অনেক বলা সত্ত্বেও নেফুর খালা বসলেন না। বাবা জোর করে তার ভাইপো কে বসিয়েছেন।
বাবা বারবার বলছে,এতো মজার রান্না আমি খুব কম খেয়েছি। আমার খালা দেখি খালু কে বকছেন এতো খাচ্ছেন বলে। নেফুর খালা আমার মা ও খালাকে প্লেটে বেড়ে দিচ্ছেন যখন আমার খালার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবি, দেখো প্রতিযোগিতায় কতো পেছনে দাঁড়িয়ে আছ তুমি। মা আর নিতে মানা করায় নেফুর খালা মা কে জড়িয়ে ধরে বলছে,খাও বুবু আমি জানি তো এরকম দিন আর আসবে না। ঝালে মিতুর চোখে পানি চলে এসেছে শুধু আমি ই খেতে পারছি না।কানে ভাসছে, দিয়ে কি হবে? খেয়েই তো যাবে। পান খেয়ে সবাই এগোচ্ছে যখন বাবা নীচু স্বরে মা কে কিছু বলতেই মা নেফুর খালা কে বলল,কাল তুই আমাদের ওখানে যাস। কথা আছে তোর সাথে। ৫০০ টাকা খালার ভাইপোর হাতে দিয়ে বাবা বললো,অনেক কষ্ট করেছ কিছু কিনে খেও।
বাবা এবার নেফুর খালাকে বলছে, সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো প্রতিদান হয় না। এটা অমূল্য, দোয়া করি তুমি আমাদের যত মায়া দেখালে এর কোটি গুণ মায়া দিয়ে যেন আল্লাহ তাআলা ঘিরে রাখেন তোমাকে বোন। কথা শুনে নেফুর খালা চোখে তখন আঁচল চাপা দিয়েছেন। রাতে বাবাকে একা পেয়ে দুপুরের শোনা কথা গুলো জানিয়ে বলি, একটা রাজহাঁসের কেনার জন্য কালকে দেড়হাজার টাকা নেফুর খালা কে দিও প্লীজ। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে, দিবো। কালকে আসতে বলেছি কারণ অনেক খালি জায়গা দেখেছি ওখানে। দুইটা গরু কিনে দিলে আয়ের উৎস হবে ওদের। টানাটানি দূর হবে ইনশাআল্লাহ। ঢাকা গিয়ে টাকা তুলে পাঠাবো ভাবছি। আমি বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ভাবছি, আমার বাবার বুকের জমিনের সব মায়া আর কাউকে সাহায্য করার সামর্থ্য ও ইচ্ছেটুকু আমাকে দিয়ে দাও মাবুদ। এই মুহূর্তে আমার আর কোনো চাহিদা নেই তোমার কাছে।